উম্মতের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর মাধ্যম হলেন নবী-রাসূলরা। সে ধারাবাহিকতায় আখেরি উম্মতের কাছে আল্লাহর সব দিকনির্দেশনা ও বিধিনিষেধ পৌঁছেছে আখেরি নবীর মাধ্যমে। এই মাধ্যম ব্যবহার না করে সরাসরি উম্মতের কাছে আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হলে তাদের পক্ষে সেগুলো শোনা ও বোঝা সম্ভব ছিল না। হজরত মুসা (আ.) মানসিক ও শারীরিকভাবে এত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর তাজালি্লতে তুর পাহাড়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে হ্যাঁ ময়দানে হাশরে আল্লাহপাক মানুষকে এমন শক্তি দান করবেন যে, মানুষ সেদিন আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এবং কথাবার্তা বলতে সক্ষম হবে।
আখেরি নবী (সা.) এর সময় থেকে কেয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তি এবং সফলতার পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ সাইয়্যেদুল আম্বি্বয়া হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে পাঠিয়েছেন। অতএব মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধসহ সব জাতির শান্তি ও সফলতার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একমাত্র পথ হলো রাসূলে করিম (সা.) এর পূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ। যারা নবীর আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করবে না তারা কোনো দিন প্রকৃত শান্তি ও সফলতার পথ খুঁজে পাবে না। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি মুসা (আ.) জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করতে বাধ্য থাকতেন।’ অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টান তো দূরের কথা যদি তাদের নবীরাও জীবিত থাকতেন তাহলে রাসূল (সা.) এর অনুসরণ-অনুকরণ করা ছাড়া তাদের নাজাতের উপায় থাকত না।
মুসলমানদের আকিদা হলো হজরত ঈসা (আ.) কে জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কেয়ামতের আগে পুনরায় তিনি দুনিয়াতে আসবেন। ইহুদিদের আকিদা হলো হজরত ঈসা (আ.) কে হত্যা করা হয়েছে। খ্রিস্টানদের অনেকের ধারণাও তাই। যারা বলে হজরত ঈসা (আ.) কে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের ধারণা একদম ভিত্তিহীন। মুসলমানরা যদি এমন আকিদা রাখে তাহলে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তারা তাকে (ঈসা আ.) হত্যা করতে পারেনি, ক্রুশবিদ্ধও করতে পারেনি, বরং তাদের ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। এ বিষয়ে যারা মতানৈক্য করে তারা তো নির্ঘাত সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে। এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ করা ব্যতীত তাদের কোনো জ্ঞানই নেই। একথা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি; বরং আল্লাহ তাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন।’
ইহুদিরা যখন হজরত ঈসা (আ.) কে হত্যা করতে ঘরে প্রবেশ করল তখন আল্লাহ নিজ কুদরতে তাকে আকাশে উঠিয়ে নিলেন। আর যে ব্যক্তি হত্যা করার ইচ্ছায় প্রথমে ঘরে প্রবেশ করেছিল আল্লাহপাক তার চেহারাকে হজরত ঈসা (আ.) এর চেহারায় রূপান্তরিত করে দিলেন। তখন অন্যরা তাকেই হজরত ঈসা মনে করে হত্যা করল। হত্যাকারীদের তখন এটা বোঝানো অসম্ভব ছিল যে, সে আসল ঈসা নয়, নকল ঈসা। আল্লাহপাকের দয়া যে, তিনি কোরআনের মাধ্যমে এর সত্যতা আমাদের জানিয়েছেন। চোখের দৃষ্টির চেয়ে আমাদের কোরআনের ওপর বিশ্বাস বেশি। ইহুদি-খ্রিস্টানদের বিশ্বাস কোরআনের ওপর নেই বলে এখনও তারা অন্ধ বিশ্বাসে নিমজ্জিত হয়ে আছে। ইহুদিদের দাবি হলো, তারা হজরত ঈসা (আ.) কে হত্যা করেছে, শূলবিদ্ধ করেছে। তাদের ধারণায় হত্যার কারণ হলো, তিনি জারজ ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)। কারণ তিনি পিতা ছাড়া দুনিয়াতে এসেছিলেন। ইহুদিদের কথাকে খ্রিস্টানরাও প্রকারান্তে মেনে নিয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, হজরত ঈসা (আ.) কেয়ামতের আগে আবার দুনিয়ায় আসবেন সাবেক ও প্রাক্তন নবী হিসেবে। আমাদের দেশে বর্তমান সরকারের সময় যেমন সাবেক সরকার ও মন্ত্রীদের কোনো কথা চলে না, তেমনি হজরত ঈসা (আ.) এর কথাও তখন চলবে না। বরং তিনি শেষ নবীর শরিয়ত ও আদর্শ অনুসরণ করে চলবেন। তিনি নবী (সা.) এর প্রতিনিধি হিসেবে এসে মুসলমানদের দেখভাল করবেন।
Comments
Post a Comment