Skip to main content

ঢাকার ঐতিহাসিক পাটুয়াটুলী জামে মসজিদে দাওয়াতুল হকের ইজতিমা অনুষ্ঠিত : ইসলাম বিরোধী কোন শিক্ষানীতি দেশবাসী মেনে নেবে না :আল্লামা মাহমুদুল হাসান

গত ১১/০৪/১০ রবিবার পাটুয়াটুলি জামে মসজিদে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের ঢাকা কোতয়ালী শাখার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের সম্মানিত আমীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতীব যাত্রাবাড়ী মাদরাসার সনামধন্য মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ ফকিহুল উম্মাহ শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব দা. বা. প্রধান অতিথির ভাষণে মুহিউস সুন্নাহ বলেন, আমাদের মুক্তির পথ একটাই তা হলো সুন্নত। সুন্নতের বিকল্প কোন পথ নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে যে, আমার সন্তুষ্টি ও মুহাব্বত লাভের পথ কেবলমাত্র আমার নবীর সুন্নতের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব। আজ আমাদের দেশে সর্বত্র সীমাহীন অস্থিরতা বিরাজ করছে। চারিদিকে শুধু অনৈক্য, বিশৃংখলা আর দ্বন্দ। কোথাও শান্তি নেই। আলেমদের পরস্পরের মাঝে মিল-মুহব্বত ঐক্য নেই। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত গোটা জাতি। কেন এসব হচ্ছে? শুধুমাত্র আমরা নবীর আদর্শ, কুরআন-সুন্নাহ এর পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। আজ থেকে যদি আমরা আমাদের সমস্ত কাজে চলা-ফেরা, উঠা-বসা, আচার-আচরণ, লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তি জীবনে, সামাজিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সুন্নতের অনুসরণ করতে পারি তবেই আমাদের মাঝে মিল-মুহব্বত, শান্তি-শৃংখলা, ঐক্য সংহতি, মানবতাবোধ ফিরে আসবে সুন্নতের বরকতে।
পথ একটাই সুন্নাত। এসলাহী জোড় হোক, দাওয়াত তাবলীগ হোক, দাওয়াতুল হক হোক, যার মধ্যে সুন্নাত নাই, নবীর কাছে তার চার পয়সার দাম নেই। যে পীরের মধ্যে সুন্নাত নাই সে পীর নয়। যে আলেমের মধ্যে সুন্নত নেই, যে ছাত্রের মধ্যে সুন্নত নেই সে আলেম বা ছাত্র নয়। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ বেদআত প্রবেশ করেছে; এর জন্য আমরা দায়ী। কারণ আমাদের মাঝে সুন্নতের চর্চা নেই। আর যেখানে সুন্নত নেই সেখানেই বেদআত প্রবেশ করে। যেখানে সুন্নত দুর্বল সেখানে বেদআত শক্তিশালী। যেখানে সুন্নতের আলো জ্বলে উঠবে সেখান থেকে বেদআতের অন্ধকার দূর হয়ে যাবে। আমরা সে পথেই চলব যে পথ সাহাবায়ে কেরামের পথ, তাবেঈন-তাবে তাবেঈনদের পথ, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন ও আকাবিরে দেওবন্দের পথ। যে পথ জন্ম দিয়েছে হাফেজ্জি হুজুর রহ. শামছুল হক ফরিদপুরি রহ. তাজুল ইসলাম রহ. আতহার আলী রহ.সহ অসংখ্য মহামনীষীদের।
একটি দল রয়েছে যারা নবীদের নিষ্পাপ মনে করে না। সাহাবায়ে কেরামদের শরীয়তের মাপকাঠি মানে না, আমরা তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করি। অথচ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম জান্নাতি। নবীর প্রতি তাদের ভালবাসা, ইসলামের জন্য তাদের ত্যাগ-তিতীক্ষা ও কুরবানীর ইতিহাস-এর দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।
নবীর প্রতি এক কৃষক সাহাবীর কী ভালবাসা ছিলো তা শুনুন। তিনি কাজ করছিলেন ফসলের ক্ষেতে। আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আবদে রাব্বিহী তাঁর নাম, তাঁর ছেলে সংবাদ নিয়ে আসল যে, মুহাম্মাদ সা. এর ওফাত হয়ে গেছে। এ সংবাদ শোনার সাথে সাথে কৃষক সাহাবীর হাত থেকে কাঁচি পড়ে গেল। চোখ বন্ধকরে দুহাত আকাশে তুলে বললেন, হে আল্লাহ! আমার কাছে সংবাদ এসেছে, তোমার নবী আর দুনিয়াতে নেই। হে আল্লাহ! আমার দুই চোখ দিয়ে এতদিন নবীকে দেখেছি আজ থেকে যখন আর দেখব না আমার চোখ অন্ধ করে দাও, আমি আর কিছুই দেখতে চাই না। আমার দুই কান দিয়ে নবীর হাদীস শুনেছি আজ থেকে যখন আর নবীর আওয়ায আমার কানে আসবে না, আমার দুই কান বধির করে দাও, আমি আর কোন আওয়ায শুনতে চাই না। শুধুমাত্র আমার যবানটা সচল রাখো। যাতে তোমার জিকির করতে পারি, তোমার নবীর সুন্নতের আলোচনা করতে পারি। আল্লাহু আকবার! কী অন্তর দিয়েই না জানি তিনি দোয়া করছিলেন, সাথে সাথে তাঁর দোয়া কবুল হয়ে গেল, তিনি অন্ধ ও বধির হয়ে গেলেন। এই ছিল তাদের ভালবাসা। ৯০% মুসলমানের এ দেশে রাসূলের বাতানো শিক্ষানীতি ব্যতীত খৃষ্টীয় শিক্ষনীতি মেনে নেয়া হবে না। একজন শরাবখোর মুসলিম পর্যন্ত তার শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকতে ইসলাম বিরোধী কোন শিক্ষানীতি, কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন মেনে নেবে না। এদেশের মুসলমানরা ইসলামের জন্য পাগল। প্রয়োজনে কুরআন-সুন্নাহর জন্য এরা জান-মাল সর্বস্ব কুরবান করে দিবে। তাই হুশিয়ার! কোন শিক্ষার বাহাদুরী করো তোমরা? যে শিক্ষায় শিক্ষকের হাতে তার ছাত্রী ধর্ষিত হয়, যে শিক্ষায় যে যত বড় শিক্ষিত হয় সে তত বড় চোর হয়, এরপর পার্লামেন্টে বসে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কথা বলে? এর জন্য কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছেলেরা দায়ী নয়। দায়ী তাদের পরিবেশ শিক্ষা বিভাগের উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষনীতি। সুতরাং শিক্ষা সিলেবাসে কুরআন সুন্নাহর অন্তরর্ভুক্তি আবশ্যক ভাবে করতে হবে।
এশার পর থেকে প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত হযরত বিভিন্ন বিষয়ের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন এবং আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। যাত্রাবাড়ী মাদরাসার সম্মানিত মুহাদ্দিস, মাসিক আল জামিয়ার সম্পাদক, পাটুয়াটুলি জামে মসজিদের সম্মানিত পেশ ইমাম, হযরত মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদির পরিচালনায় ইজতেমায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য পেশ করেন। বিশেষ অতিথি হযরত মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। আরো বয়ান রাখেন জামিয়া রাহমানিয়ার মুহতামিম হযরত মাওলানা হেফজুর রহমান সাহেব, প্রফেসর গিয়াস উদ্দীন সাহেব, ঢালকানগরের হযরত মাওলানা আব্দুল মতিন সাহেব, মুফতি জাফর আহমদ সাহেব, মুফতি উবাইদুল্লাহ সাহেব, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব, বসুন্ধরার মুফতি মিজানুর রহমান সাহেবসহ দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম। দিনব্যাপী এজতেমায় অযু, আযান, একামত ইত্যাদির সুন্নত তরিকার বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

Comments

Popular posts from this blog

জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা :আমাদের মাদ্রাসার কিছু খন্ড চিত্র

কেমন আছেন ইলমে হাদীসের জিবন্ত কিংবদন্তী শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক

বি,বাড়িয়া যাচ্ছি। ট্রেনের নাম মহানগর প্রভাতী । অনেকদিন পর ২টি কাজ এক সাথে হল বি,বাড়িয়া যাওয়া আর ট্রেনে চড়া। জামিয়া দারুল আরকামের ১৮ সালা দস্তারবন্দী সম্মেলন। প্রতিষ্ঠার দির্ঘ সময় পর এই প্রথম মাহফিল। সে উপলক্ষে সাবেক সকল ছাত্রবৃন্দ সেখানে একত্রিত হচ্ছে। আমি সেখানের কিছু সময়ের সাবেক। সে উপলক্ষেই যাওয়া। সকাল ৮ টার ট্রেন ছাড়লো ১০টায়। যাক তাও তো ছাড়লো, না ছাড়লেও তো কিছু করার ছিল না। বি,বাড়িয়া শহর পাশ কাটিয়ে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুদের কারো ভাষ্যে এ দেশের ‘জামে আজহার’ জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়ার দৃষ্টি নন্দন ভুবনে যখন পৌছলাম তখন দুপুর ১টায়। বেলা ৩ টা থেকে মাহফিল শুরু হলেও মজমা জমে উঠলো বাদ আসর। বিশাল প্যান্ডেল,স্বাভাবিকভাবে কমপক্ষে হাজার দশেক লোক এটে যাবে, মাগরিবের পর দেখলাম পেন্ডেল পুরুপুরি ভরে গেছে । এমনকি বাহিরেও প্রচুর লোক বসা। এতো বিপুল পরিমান লোক সমাগমের মুল কারণ দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস আল্লামা সাইদ আহমাদ পালনপুরী। তিনি আজ এখানের প্রধান অতিথি। ইতিমধ্যে হযরতের তাশরিফ এনেছেন দারুল আরকামে। মাঝখানে একবার গিয়ে শতবর্ষি মাদরাসা জামিয়া ইউনুসিয়া ও ফখরে বাঙ্গাল