Skip to main content

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা.-এর অনুরোধে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অবমাননাকর সিনেমার নিন্দা জানালেন

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ ইং শুক্রবার। জুমার নামাযের জন্য আগত মুসল্লীতে বরাবরের মতো পূর্ণ হয়ে গেলো গুলশান সেন্ট্রাল আযাদ মসজিদ। সর্বজন শ্রদ্ধেয় খতীব, ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, বিদগ্ধ আলেমে দ্বীন, ইসলামের অমিত সাহসী বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা. দরাজ কণ্ঠে বয়ান শুরু করলেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তখন জুমার নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে উপস্থিত। খতীব আল্লামা মাহমুদুল হাসান (মুহতামিম, যাত্রাবাড়ী মাদরাসা ও আমীর মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ)-এর ব্যক্তিত্ব ও আলোচনা তাঁকে মুগ্ধ করে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই মসজিদে একবার এসেছেন। আজ দ্বিতীয়বার। অসুস্থ রাষ্ট্রপতি মিম্বারের সামনে চেয়ারে উপবিষ্ট। খতীব সাহেব মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননা করে আমেরিকার জনৈক ইহুদী কর্তৃক সিনেমা তৈরি এবং ফ্রান্সের ইসলাম বিদ্বেষী একটি সাপ্তাহিকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অশ্লীল ব্যাঙ্গচিত্র (কার্টুন) ছাপানোর ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রসঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে দরদভরা কণ্ঠে বললেন, আপনি আজ এখানে এসেছেন, আমরা খুবই খুশি হয়েছি। আপনি সমগ্র দেশবাসীর পিতৃতুল্য মুরব্বী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনি ওয়াকিফহাল আছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলমানের হৃদয়ে আগুন জ্বলছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পাশাপাশি কলেজ-ভার্সিটির ছাত্ররাও প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই ঘৃণ্য কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এমনকি আমেরিকার সরকারের প্রতি নিন্দা ও জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশের কোটি কোটি জনতা ধর্মের ব্যাপারে আপোষহীন। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-পরিষদ ও পার্লামেন্ট মেম্বরদের প্রায় সবাই মুসলিম। তারপরও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের মুসলমানদের অন্তরের ব্যথার সাথে একাত্মতা প্রকাশের কোনো ঘোষণা আমরা পাইনি। এদেশের সরকার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননায় কি ব্যথা অনুভব করে না? আমরা আশা করি নিশ্চয়ই করে। কিন্তু জাতি এ ব্যাপারে আপনাদের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য-বিবৃতি না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও বিভ্রান্ত। তাই আমি আপনার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, জাতিকে শান্ত্বনা দিয়ে এই চরম ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে আপনি কিছু বলুন। এতে করে হয়তো ব্যথায় ভারাক্রান্ত মুসলিম ভায়েরা প্রতিবাদ -বিক্ষোভকালে আক্রমণ-সহিংসতা এড়িয়ে চলবে ইনশাআল্লাহ! শুধু খতীব হিসেবে না বরং আপনার সাথে আমার অনেক পুরাতন পরিচিতি ও সম্পর্কের ভিত্তিতে উপস্থিত মুসল্লী ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছে এ অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি কিছু বলার আগ্রহ পোষণ করলে খতীব সাহেব মাইক এগিয়ে দেন। তখন রাষ্ট্রপতি যা বলেন, তার সার সংক্ষেপ হলো- “আসসালামু আলাইকুম। আমি আজকে আপনাদের এখানে আসতে পেরে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার পরম সৌভাগ্য, আমি আপনাদের কাছে এখানে আসতে পেরেছি এবং আপনাদের সাথে নামায আদায় করব ইনশাআল্লাহ। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশ্বাস করি। ইসলামকে বিশ্বাস করি। আমাদের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। কারণ মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলো মানুষ। সেই মানুষের মঙ্গলের জন্য, কল্যাণের জন্য, শান্তির জন্য আমরা নানাভাবে চেষ্টা করি, চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। আর মানুষমাত্রেই ভুল হয়। কিন্তু আমাদের চেষ্টা ও ইচ্ছা থাকে, মানুষের সেবা করা, দেশের সেবা করা, আল্লাহর ইবাদত করা। এ ব্যাপারে আমরা সমস্ত ধ্যান-ধারণা ব্যয় করে থাকি। ভবিষ্যতেও যেন করতে পারি, আপনাদের সেবা করতে পারি, আপনাদের জীবনে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, সে শক্তি যেন আল্লাহ আমাকে দেন সেজন্য আমার জন্য দোয়া করবেন। শ্রদ্ধেয় খতীব সাহেব যেটা বলেছেন সেটা অত্যন্ত সত্যি কথা। অত্যন্ত বা¯Íব কথা যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তাঁর সম্মানের উপর আঘাত কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর প্রতি অবমাননাকর যে সিনেমা তৈরী করা হয়েছে আমি তার নিন্দা জানাই। এ ব্যাপারে আমি আপনাদের সাথে আছি আর ভবিষ্যতেও থাকব। আপনারা আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করবেন।”
অতঃপর খতীব আল্লামা মাহমূদুল হাসান সাহেব রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব যা বলেছেন তার সারকথা হলো- “আমি মুসলিম, আমরা সবাই মুসলমান। আমরা এদেশে মুসলিম অমুসলিম সবার সেবা করি এবং সবার কল্যাণ কামনায় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মুসলমানদের নবী এই কল্যাণ সাধনের চেষ্টা করেছেন। এজন্য যেমন কোন জাতির উপর আঘাত আমরা পছন্দ করি না, তেমনি মুসলমান জাতি হিসেবে নবীর উপর আঘাত। আমরা বরদাশত করি না। এ অপতৎতরতা আমরা মনে প্রাণে ঘৃণা করি। এ জাতীয় ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা সেই দিকে দৃষ্টি রাখব।” সবশেষে খতীব সাহেব বলেন, আল্লাহপাক আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন!

Comments

Popular posts from this blog

জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা :আমাদের মাদ্রাসার কিছু খন্ড চিত্র

ঢাকার ঐতিহাসিক পাটুয়াটুলী জামে মসজিদে দাওয়াতুল হকের ইজতিমা অনুষ্ঠিত : ইসলাম বিরোধী কোন শিক্ষানীতি দেশবাসী মেনে নেবে না :আল্লামা মাহমুদুল হাসান

গত ১১/০৪/১০ রবিবার পাটুয়াটুলি জামে মসজিদে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের ঢাকা কোতয়ালী শাখার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের সম্মানিত আমীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতীব যাত্রাবাড়ী মাদরাসার সনামধন্য মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ ফকিহুল উম্মাহ শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব দা. বা. প্রধান অতিথির ভাষণে মুহিউস সুন্নাহ বলেন, আমাদের মুক্তির পথ একটাই তা হলো সুন্নত। সুন্নতের বিকল্প কোন পথ নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে যে, আমার সন্তুষ্টি ও মুহাব্বত লাভের পথ কেবলমাত্র আমার নবীর সুন্নতের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব। আজ আমাদের দেশে সর্বত্র সীমাহীন অস্থিরতা বিরাজ করছে। চারিদিকে শুধু অনৈক্য, বিশৃংখলা আর দ্বন্দ। কোথাও শান্তি নেই। আলেমদের পরস্পরের মাঝে মিল-মুহব্বত ঐক্য নেই। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত গোটা জাতি। কেন এসব হচ্ছে? শুধুমাত্র আমরা নবীর আদর্শ, কুরআন-সুন্নাহ এর পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। আজ থেকে যদি আমরা আমাদের সমস্ত কাজে চলা-ফেরা, উঠা-বসা, আচার-আচরণ, লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তি জীবনে, সামাজিক জীবনে, রাষ্

কেমন আছেন ইলমে হাদীসের জিবন্ত কিংবদন্তী শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক

বি,বাড়িয়া যাচ্ছি। ট্রেনের নাম মহানগর প্রভাতী । অনেকদিন পর ২টি কাজ এক সাথে হল বি,বাড়িয়া যাওয়া আর ট্রেনে চড়া। জামিয়া দারুল আরকামের ১৮ সালা দস্তারবন্দী সম্মেলন। প্রতিষ্ঠার দির্ঘ সময় পর এই প্রথম মাহফিল। সে উপলক্ষে সাবেক সকল ছাত্রবৃন্দ সেখানে একত্রিত হচ্ছে। আমি সেখানের কিছু সময়ের সাবেক। সে উপলক্ষেই যাওয়া। সকাল ৮ টার ট্রেন ছাড়লো ১০টায়। যাক তাও তো ছাড়লো, না ছাড়লেও তো কিছু করার ছিল না। বি,বাড়িয়া শহর পাশ কাটিয়ে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুদের কারো ভাষ্যে এ দেশের ‘জামে আজহার’ জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়ার দৃষ্টি নন্দন ভুবনে যখন পৌছলাম তখন দুপুর ১টায়। বেলা ৩ টা থেকে মাহফিল শুরু হলেও মজমা জমে উঠলো বাদ আসর। বিশাল প্যান্ডেল,স্বাভাবিকভাবে কমপক্ষে হাজার দশেক লোক এটে যাবে, মাগরিবের পর দেখলাম পেন্ডেল পুরুপুরি ভরে গেছে । এমনকি বাহিরেও প্রচুর লোক বসা। এতো বিপুল পরিমান লোক সমাগমের মুল কারণ দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস আল্লামা সাইদ আহমাদ পালনপুরী। তিনি আজ এখানের প্রধান অতিথি। ইতিমধ্যে হযরতের তাশরিফ এনেছেন দারুল আরকামে। মাঝখানে একবার গিয়ে শতবর্ষি মাদরাসা জামিয়া ইউনুসিয়া ও ফখরে বাঙ্গাল